যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের বৈধতা ঠেকাতে তৎপর রক্ষণশীলরা
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করতে রক্ষণশীলদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল বুধবার রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য সিনেটে পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ঘোষিত অভিবাসন পদক্ষেপ বানচাল করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। হোম ল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের জন্য ব্যয় বরাদ্দে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
অবশিষ্ট অর্থবছরের জন্য ৪০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ বরাদ্দ প্রস্তাবে প্রেসিডেন্ট ওবামার অভিবাসনসংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ পাল্টে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সিনেটে প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার ব্যাপারে অবশ্য রক্ষণশীলরাও নিশ্চিত নয়। পাশাপাশি হোয়াইট হাউস থেকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া হবে।
সম্প্রতি কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে প্রায় ৫০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে সাময়িক বৈধতা দেওয়ার ঘোষণা দেন ওবামা।
অভিবাসী গোষ্ঠীগুলো প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণায় আশাবাদী হয়ে উঠেছে। কিন্তু তাদের সেই আশা ধূলিসাৎ করতে উঠেপড়ে লেগেছে রক্ষণশীলরা। উদ্যোগটিকে ঠেকাতে নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অর্থ বরাদ্দসহ নানামুখী চাপ ও প্রচারণার মাধ্যমে রক্ষণশীলদের এই প্রচেষ্টা চলমান।
প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাব গ্রহণের পর রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান মিক মালভেনি বলেছেন, আইন কখনো হোয়াইট হাউসে তৈরি হয়নি। ভবিষ্যতেও যদি কোনো রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন, তখনো এর বিরোধিতা করা হবে।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকির জন বয়েনার বলেছেন, ‘আইনের শাসন ও সংবিধান সংরক্ষণের জন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবহির্ভূত নির্বাহী আদেশের বিপক্ষে দাঁড়ানো ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।’
প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাট দলের হুইপ স্টেনি হোয়েরার বলেছেন, রিপাবলিকানদের প্রস্তাবটি আমেরিকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অভিবাসন নিয়ে ওবামার নির্বাহী আদেশের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হলে পরিবার বিচ্ছিন্নতা বাড়বে। অল্প বয়সে যারা নিজের অজান্তেই এ দেশে অবৈধ অভিবাসনের শিকার হয়েছে, তাদের ওপর বিতাড়নের খড়্গ নেমে আসবে।
রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ওবামার নির্বাহী আদেশ ঠেকাতে ফেডারেল আদালতে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে না বলেই মনে করছেন অভিবাসী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। কারণ কেবল সুপ্রিম কোর্টের রায় কিংবা পরবর্তী প্রেসিডেন্টের পৃথক নির্বাহী আদেশে ওবামা ঘোষিত কর্মসূচি বাতিল হতে পারে।
ওবামার নির্বাহী আদেশ ঘোষণার প্রায় দুই মাস হতে চলেছে। বৈধতার জন্য আবেদনপত্র গ্রহণের সময়সীমা বা নিয়মাবলি ঘোষণা না করায় অভিবাসী মহলে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। দিকনির্দেশনার অভাবে প্রায় ৫০ লাখ অভিবাসী তাঁদের ভাগ্য নিয়ে অন্ধকারে আছেন। নির্বাহী আদেশের বিস্তারিত, আবেদনের প্রাকযোগ্যতা, আবেদন ফিসহ অন্যান্য নিয়ম জানার জন্য সবাই উদগ্রীব। কবে থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে—তাও কেউ জানাতে পারছেন না।
অভিবাসন বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা এখন পর্যন্ত জারি করা হয়নি। অভিবাসন বিষয় দেখভালের দায়িত্বে সরকারের হোম ল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। তাদের ওয়েবসাইটে এখনো এ-সংক্রান্ত কোনো নিয়মাবলি ঘোষণা করা হয়নি।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, অভিবাসন বিভাগ ব্যাপক সংখ্যক আবেদন সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এরই মধ্যে জরুরিভাবে এক হাজার লোক নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণের আয়োজনসহ ওয়াশিংটনের বাইরে বিশাল স্থাপনা ভাড়া করা হয়েছে। বছরে ৮০ লাখ ডলারে ভার্জিনিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল স্থাপনা ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
ফক্স নিউজ গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে আগামী মে মাস থেকে আবেদনপত্র গ্রহণের ঘোষণা আসতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, ওবামার ঘোষণা নিয়ে সংশয় থাকলেও শঙ্কার কোনো কারণ নেই। প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের কার্যকারিতা বাজেট বরাদ্দ দিয়ে রিপাবলিকানরা ঠেকিয়ে দিতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি।
নিউইয়র্কের অভিবাসন আইনজীবী সেলিম রিজভী বলেছেন, ওবামার নির্বাহী আদেশ নিয়ে এখনো ফেডারেল গেজেট নোটিশ প্রকাশিত হয়নি। মধ্য মার্চের দিকে এ-সংক্রান্ত আবেদনের একটি নির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে তাঁর আশা।